একটি ফ্ল্যাট কেনা শুধুমাত্র আবাসন চাহিদার ব্যবস্থা করাই নয় ভবিষ্যতের জন্য একটি খুঁটির ব্যবস্থা করাও বটে। বর্তমান সময়ে বাজারে ঊর্ধ্বগতি দিকে লক্ষ্য রাখলে দেখা যায় সবকিছুর দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আবাসন চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও রাখতে হচ্ছে অতিরিক্ত বাজেট।
স্বল্প পুঁজি ব্যয় করে আবাসন চাহিদা মিটানোর সহজ মাধ্যম হল ফ্ল্যাট ক্রয় করা। ফ্ল্যাট ক্রয় ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো সঞ্চয় মাধ্যম হতে পারে। ফ্ল্যাট ক্রয় করতে অল্প পুজির প্রয়োজন হয়। ফ্ল্যাট ক্রয় করে সুন্দর করে মনের মত সাজিয়ে বসবাস করা যেতে পারে। ফ্লাট এর ক্ষেত্রে প্রতিমাসের ছোট্ট একটি আনুষাঙ্গিক খরচ থাকে। তাই জীবনধারণ করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়না। তাই ফ্ল্যাট ক্রয় ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আকাশচুম্বী দামে ফ্লাট ক্রয় করা খুব কঠিন ব্যপার হয়ে পড়েছে। তার ওপর মনের মতো একটি ফ্ল্যাট সুন্দর পরিবেশে খুঁজে পাওয়াও সহজ কথা নয়। সেজন্য যেমন চাই সময়, তেমন চাই ধৈর্যও। পাশাপাশি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করা এবং অন্যের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নেওয়া উচিত আইনি সহায়তাও।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে মালিকানার ধরনটি দেখে নিতে হবে। ফ্লাটটির পূর্বের মালিক কি-রকম ছিলেন তা দেখে নিতে হবে। আপনি যে ফ্ল্যাটটি কিনছেন, সে ফ্ল্যাটটি কেনার ক্ষেত্রে কোন অংশীদার আছে কিনা, অন্য কেউ থাকলে সে কত শতাংশের অংশীদার এবং আপনি কত শতাংশের অংশীদার হবেন এই সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাশাপাশি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে দেখে নিতে হবে যে, ফ্ল্যাটটি আপনার পূর্বে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা হয়েছিল কিনা এবং পূর্বে কার নামে রেজিস্টার করা ছিল, সব বিষয়ই খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়াও বর্তমানে দেখা যায়, স্বল্প পুঁজি থাকায় অনেকে নিজের জায়গা ডেভলপারকে দিয়ে ফ্ল্যাট নেয়। এক্ষেত্রে আপনি কয়টি ফ্ল্যাটের কিরকম মালিকানার রয়েছেন, কোনো যৌথ মালিকানা রয়েছে কিনা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাকে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। এছাড়াও ডেভলপার নির্বাচনের ক্ষেত্রে হতে হবে সচেতন। কিছু কিছু ডেভলপার অনেক কম দামে বেশি সুবিধা দিয়ে থাকে।
তাই সে ক্ষেত্রে বুঝে শুনে ডেভলপার নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও যে ডেভলপারদের তত্ত্বাবধানে ফ্ল্যাট নিচ্ছেন তাদের জনবল, দক্ষতা, কাজ করার ধরন সবকিছু সম্পর্কে আপনাকে অবগত থাকতে হবে। ফ্ল্যাটটি কেনার পর কত দিনের মধ্যে আপনি যাবতীয় কাগজপত্র এবং দলিল পাবেন এ সবকিছু আপনাকে দেখাতে হবে ফ্ল্যাট কেনার পূর্বেই।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আপনি যেখানে সেখানে ফ্ল্যাট কিনলেই চলবে না। একটি ফ্ল্যাট একটি স্থায়ী ঠিকানা। তাই খেয়াল রাখতে হবে আপনার ব্যবসা কিংবা আপনার অফিস যেন বেশি দূরত্বে না হয়। আপনার বাচ্চাদের স্কুল কলেজের দূরত্ব যেন বেশী না হয়।
পাশাপাশি ফ্ল্যাট হতে মেইন রাস্তায় উঠার জন্য যেন যাতায়াত ভাড়া গুনতে হয় এই সবকিছু বিবেচনা করে ফ্ল্যাট নির্বাচন করতে হবে। ফ্ল্যাট নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এলাকার অন্যান্য ফ্ল্যাটগুলো কিরকম মূল্য রয়েছে তা চিন্তা করে, নিজের ফ্ল্যাটের মূল্য ধারণ করতে হবে। ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে নিজের পছন্দমত জায়গায় মনের মত দামে ফ্ল্যাট পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা ঝামেলা যা খুব সহজে এড়ানো সম্ভব যদি একটু সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। সাধারণত প্রতারিত হওয়া, সময় মতো ফ্ল্যাটের মালিকানা না পাওয়া, অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া ও রাজউক অনুমোদিত না হওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হন গ্রাহকরা ফ্ল্যাট কিনার সময়। তাই এসব ঝামেলা এড়াতে যেসব বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তা তুলে ধরা হলো :
- প্রথমত যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ফ্ল্যাটটি কিনতে যাচ্ছেন তার মালিকানা আছে কি না, তা যাচাই করুন। নির্ধারিত ফ্ল্যাটটি যে জমিতে অবস্থিত তার সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কি না তা যাচাই করুন।এছাড়া সকল খতিয়ানের ক্রম(সিএস, আরএস) মিলিয়ে দেখুন। আর রিয়েল এস্টেট কোম্পানিটির যথাযথ নিবন্ধন আছে কি না এবং রিহ্যাবের সদস্য কি না জেনে নিতে হবে। জমিটি যদি ডেভেলপার কোম্পানি কোনো মালিকের কাছ থেকে নিয়ে থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে চুক্তিপত্র আছে কি না যাচাই করতে হবে।
- জমির নামজারি ঠিক আছে কি না এবং ওয়ারিশ সংক্রান্ত কোন বিষয় আছে কিনা, বণ্টনের মোকদ্দমা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
- ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেওয়ার কারণে সার্টিফিকেট মামলা হয়, এধরনের কোনো মামলা আছে কি না, এ বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।
- জমিটির ওপর অন্য যে কোনো মামলা আছে কি না, জেনে নিতে হবে।
- বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি নকশার সঙ্গে বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে রয়েছে কিনা তা সরেজমিনে দেখতে হবে। প্রয়োজনে আশপাশের ভূমিমালিকদের কাছ থেকে খতিয়ানে দাগ নম্বর জেনে মেলাতে হবে।
- অবশ্যই স্পষ্ট করে সব শর্ত উল্লেখ করে আইনগত উপায়ে চুক্তি সম্পাদন করে একটি কপি নিজের কাছে রাখতে হবে।
- ফ্ল্যাটটি যে ভবন তা নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কি না এবং এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে নিতে হবে।
- বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে। গ্যাস-সংযোগ লাইনটি বৈধ ভাবে নেওয়া হয়েছে কি না তা যাচাই করতে হবে। যদিও বর্তমানে নতুন কোনো ফ্ল্যাটে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
- প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরকারের খাসজমিতে পড়েছে কি না কিংবা সরকারের কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হতে পারে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জমিটি অর্পিত সম্পত্তি কিংবা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কি না, সেটাও যাচাই করতে হবে। জমিটি অধিগ্রহণ হয়েছে কি না বা প্রক্রিয়াধীন কি না অথবা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।
- ঋণের জন্য ফ্ল্যাটটি কোনো ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে কি না, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
- কোনো প্রকার মধ্যস্থতাকারীর ব্যক্তি(দালাল) বা প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি না কিনে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেনা ভালো।
- পরিচ্ছন্ন পরিবেশের নিশ্চয়তা।
- ফ্ল্যাটটি যদি কিস্তির মাধ্যমে কেনার কথা থাকে, তাহলে কয়টি কিস্তি এবং কবে হস্তান্তর হবে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে দলিলে লেখা থাকতে হবে। যদি কোনো কারণে না কেনা যায়, তাহলে এটি কোন উপায়ে নিষ্পত্তি হবে, তা-ও স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
- ফ্ল্যাটটি এর আগে অন্য কারও কাছে বিক্রি হয়েছে কি না, খোঁজ নিতে হবে। সব ধরনের চার্জ, রেজিস্ট্রেশন ফি এবং দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করে জেনে নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ঝামেলা না হয়।
ডাউন পেমেন্ট/ অর্থ পরিশোধের আগে করণীয়:
- জমির দলিল সঠিক কিনা তা ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে।
- ডেভেলপার কোম্পানির সরকারি অনুমোদন আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
- রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত প্ল্যান এর কপি আছে কিনা তা দেখতে হবে।
- ডেভেলপার কোম্পানি রিহ্যাব (রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সদস্য কি না তা যাচাই করে নিতে হবে।
- ফ্ল্যাট বরাদ্দের নির্ধারিত সময় এবং সব শর্ত ভালো করে বুঝে নিতে হবে।
আইন অনুযায়ী ক্রেতা হিসেবে আপনি যেসব সুবিধা পেতে পারেন:
- ফ্ল্যাট কিনার সময় চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে এবং এ বিষয়ে গ্রাহক সকল তথ্য জানার অধিকার রাখে।
- ফ্ল্যাট তৈরিতে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হবে চুক্তিতে অবশ্যই তার বিবরণ থাকতে হবে। পরিকল্পিত নকশাও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্রেতাকে দিতে বাধ্য থাকবেন।
- চুক্তির ভিত্তিতে পছন্দসই ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবেন। আবার বিনা অনুমতিতে বরাদ্দ করা ফ্ল্যাট পরিবর্তন করতে পারবেন না।
- চুক্তিতে উল্লেখিত শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে ক্রেতা বাধ্য থাকবেন না। যদি কোনো উন্নতমানের সরঞ্জাম সংযোজনের দরকার হয়, তাহলে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া যেতে পারে।
- সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ৩ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠান তার ক্রেতাকে মালিকানা হস্তান্তর, দলিল তৈরি এবং নিবন্ধনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে দেবেন। হস্তান্তরের সময় আয়তনে কম-বেশি হলে তার ক্রয়মূল্য অনুযায়ী যে অর্থ গ্রাহক ফেরত পাবে ঐ অর্থ ৩ মাসের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
উপরক্ত বিষয়গুলো জানা একজন গ্রাহকের অধিকার যা আইন অনুযায়ী গ্রাহক প্রয়োগ করতে পারে। এসিওর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। আমরা ২০০৭ সালে দেশের নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করি। শুরু থেকে, আমরা জীবন চূড়ান্ত স্বাচ্ছন্দ্য সহ আবাসিক এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি সরবরাহ করে আসছি। যখন মান বজায় রাখার কথা আসে, আমরা বিল্ডিং প্রকল্পের প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোত্তম প্রচেষ্টাটি নিশ্চিত করে।